উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো উত্তর-পূর্ব পরিষদের (এনইসি) সদস্য। ১৯৭১ সালে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এই পরিষদ গড়ে তোলা হয়েছিল। ২০০২ সালে সিকিম উত্তর-পূর্ব পরিষদের অষ্টম সদস্য রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। ভারতের "লুক ইস্ট" সংযোগ প্রকল্প উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে পূর্ব এশিয়া ও আসিয়ানের সাথে সংযুক্ত করে। আসামের গুয়াহাটি শহর ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহর উভয় "উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার" নামে পরিচিত এবং গুয়াহাটি উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বৃহত্তম শহর।
সেভেন সিস্টার এর ইতিহাস
সম্ভবত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অস্ট্রো-এশীয় ভাষাভাষী জনগণ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদিমতম বাসিন্দা। পরে চীন থেকে তিব্বতি-বর্মীয় ভাষাভাষী জনগণ, ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে ইন্দো-আর্য ভাষাভাষী জনগণ এবং চীনের দক্ষিণ ইউন্নান প্রদেশ ও মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে তাই-কাদাই জনগণ সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করতে লাগল।
এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও শস্য বৈচিত্র্যের জন্য পুরাতাত্ত্বিক গবেষকদের বিশ্বাস যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদগুলোকে গৃহপালিত করেছিল। লেখকদের অনুমান, চীনা ভ্রমণকারী চুয়াং ছিয়ানের ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের লেখায় উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে এক আদি বাণিজ্যপথের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
প্রাথমিক ঐতিহাসিক পর্বে (প্রথম সহস্রাব্দের বেশিরভাগ) কামরূপ রাজ্য উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। চীনা বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতাব্দীতে কামরূপ রাজ্যে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার জনগণকে বেঁটে ও কৃষ্ণবর্ণের বলে বর্ণনা করেছিলেন।
হিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ী, তাদের ভাষা মধ্য ভারতের তুলনায় সামান্য আলাদা এবং তাদের স্বভাব সরল অথচ হিংস্র। তিনি লিখেছিলেন যে কামরূপের জনগণ সিছুয়ান সম্পর্কে জানত, যা কামরূপ রাজ্যের পূর্বের এক ভয়ঙ্কর পর্বতের অন্যপারে অবস্থিত।
ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ আমলে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বর্তমান রাজ্যগুলো গড়ে উঠেছিল। তখন তারা ভুটান ও মিয়ানমারের মতো বাণিজ্যিক সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ব্রিটিশ (ওয়েলশ) মিশনারিদের প্রভাবে বর্তমান নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়ের অনেক ব্যক্তিদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছিল।
ভারতের ৭টি অঙ্গরাজ্যের নাম মনে রাখার কৌশল-
* অত্র মেম আমিনা
নং: | সংকেত | রাজ্য (রাজধানী) |
---|---|---|
১. | অ | অরুনাচল (ইন্দিরাগিরি) |
২. | ত্র | ত্রিপুরা (আগরতলা) |
৩. | মে | মেঘালয় (শিলং) |
৪. | ম | মনিপুর (ইম্ফল) |
৫. | আ | আসাম (গোয়াহাটি) |
৬. | মি | মিজরাম (আইজল) |
৭. | না | নাগাল্যান্ড (কোহিমা) |
১. অরুণাচল প্রদেশ:
অরুনাচল প্রদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এর দক্ষিণে ভারতের অঙ্গরাজ্য আসাম, পশ্চিমে ভুটান, উত্তর ও উত্তর-পূর্বে চীন, এবং পূর্বে মিয়ানমার। অরুণাচল প্রদেশের আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। এর রাজধানী ইটানগর। চীনের তিব্বতের সাথে অরুণাচল প্রদেশের ১১২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে।
২. ত্রিপুরা
ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এটি দেশের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য, যার আয়তন ১০,৪৯১ কিমি২ (৪,০৫১ মা২) এবং প্রায় ৩.৬৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা সহ সপ্তম-সর্বনিম্ন জনবহুল রাজ্য। এটি পূর্বে আসাম এবং মিজোরাম রাজ্য এবং উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত। ত্রিপুরা 8টি জেলা এবং ২৩টি মহকুমায় বিভক্ত, যেখানে আগরতলা হল রাজধানী এবং রাজ্যের বৃহত্তম শহর। ত্রিপুরায় ১৯টি ভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায় রয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনসংখ্যার সাথে। বাংলা, ইংরেজি এবং ককবরক হল রাজ্যের সরকারী ভাষা।
৩. মেঘালয়
মেঘালয় অর্থ "মেঘের আবাসস্থল" সংস্কৃত মেঘা মানে "মেঘ" + আ-লয়া মানে "আবাস"), উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি আসাম রাজ্য থেকে দুটি জেলা নিয়ে মেঘালয় গঠিত হয়েছিল: ইউনাইটেড খাসি পাহাড় এবং জয়ন্তীয়া পাহাড় এবং গারো পাহাড়। মেঘালয় পূর্বে আসামের অংশ ছিল, কিন্তু ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি খাসি, গারো এবং জৈন্তিয়া হিলস জেলাগুলি মেঘালয়ের নতুন রাজ্য হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের হিসাবে মেঘালয়ের জনসংখ্যা অনুমান করা হয় ৩,২১১,৪৭৪ জন। মেঘালয় প্রায় ২২,৪৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যার দৈর্ঘ্য-থেকে-প্রশস্ত অনুপাত প্রায় ৩:১।
৪. মণিপুর
মণিপুর হল উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল। এই রাজ্যের উত্তরে নাগাল্যান্ড, দক্ষিণে মিজোরাম, পশ্চিমে আসাম ও পূর্বদিকে মিয়ানমার। এই রাজ্যের আয়তন ২২,৩২৭ বর্গকিলোমিটার।
মৈতেই উপজাতির মানুষেরা প্রধানত রাজ্যের উপত্যকা অঞ্চলে বাস করে। এরাই রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী (জনসংখ্যার ৬০%)। মণিপুরি বা মৈতেইরা পাঁচটি সামাজিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত – মৈতেই মারুপ (এরা মৈতেই সংস্কৃতি ও মৈতেই ধর্মে বিশ্বাস করে), মৈতেই খ্রিস্টান, মৈতেই গৌর চৈতন্য (মৈতেই ধর্ম ও হিন্দুধর্ম উভয়েই বিশ্বাস করে), মৈতেই ব্রাহ্মণ (স্থানীয় নাম "বামোন)" ও মণিপুরি মুসলমান (স্থানীয় নাম মিয়া মৈতেই বা পাঙাল)। মৈতেই বা মণিপুরি ভাষা তাদের মাতৃভাষা এবং এই রাজ্যের প্রধান সংযোগরক্ষাকারী ভাষা (লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা)।
৫. আসাম
আসাম উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। আসামের অধিবাসী বা আসামের ভাষাকে অসমীয়া নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে আসামের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী বাঙালী। ব্রিটিশ শাসনকালে বিশেষ করে ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অনেক শ্রমিক এনেছিলেন চা বাগানে জন্য। যার মধ্যে অন্যতম রাজ্য ওড়িশা এবং বিহার (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডসহ)।
১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু চুক্তির মাধ্যমে আসাম প্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ প্রদেশ মূলত চা, রেশম তন্তু, খনিজ তেল এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। আসাম বাড়ি এক শৃঙ্গযুক্ত ভারতীয় গণ্ডার এছাড়াও এখানে বুনো মহিষ, বেঁটে শূকর, বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষিত হয়েছে। এশীয় হাতির অন্যতম বাসস্থান হল আসাম। এ রাজ্যটি বন্যপ্রাণী পর্যটনের ক্ষেত্রে ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠছে।
৬. মিজোরাম
মিজোরাম উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। আইজল মিজোরামের রাজধানী। মি (জাতি), জো (পাহাড়) এবং রাম (ভূমি), এই তিনটি শব্দ থেকে উদ্ভূত মিজোরাম বলতে "পাহাড়ি জাতির ভূমি" বোঝায়। ভারতের উত্তর-পূর্বে, এটি সর্বদক্ষিণের স্থলবেষ্টিত রাজ্য এবং ত্রিপুরা, আসাম, মণিপুর এই তিনটি রাজ্যের সাথে যার সীমানা রয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের প্রায় ৭২২ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে মিজোরামের সীমানা অবস্থিত।
৭. নাগাল্যান্ড
নাগাল্যান্ড উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এটির পশ্চিমে আসাম, উত্তরে অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম, পূর্বে মিয়ানমার এবং দক্ষিণে মণিপুর সীমানা রয়েছে। রাজ্যের রাজধানী কোহিমা, এবং বৃহত্তম শহর ডিমাপুর। এই রাজ্যে ১৬,৫৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনে ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১,৯৮০,৬০২ জনসংখ্যা আছে, এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলির মধ্যে একটি।